Monday, August 15, 2016

*****পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ*****

*****পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ*****


পরম পুরুষোত্তম ভগবান তাঁর পরমধামে অবস্থান করলেও তিনি মনের গতির চেয়েও দ্রুততর গতিতে সকলকে অতিক্রম করতে পারেন। শক্তিমান দেবগণও তাঁর সম্মুখীন হতে পারেন না। একস্থানে অবস্থান করলেও, তিনি বায়ু ও বৃষ্টির দেবতাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। সর্ব বিষয়েই তিনি শ্রেষ্ঠতার বিচারে অপরাজেয় থাকেন।” ব্রহ্মসংহিতাতেও একই কথা বলা হয়েছে- গোলোক এব নিবসত্যাখিলাত্মভূতঃ। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ গোলোক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজ করলেও সকল জীবের অন্তরে তিনি অধিষ্ঠিত রয়েছেন।

গোলোকধামে শ্রীকৃষ্ণকে কোন কর্তব্যকর্ম সাধন করতে হয় না। তিনি শুধু তাঁর পারিষদদের অর্থাৎ গোপী, গোপসখা, তাঁর মাতা, পিতা ও নিজের গাভী ও বাছুরদের নিয়ে আনন্দ উপভোগ করেন। তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর তাঁর বন্ধুরা আরও বেশী স্বাধীন। যখনই তারা কোনও বিপদের সম্মুখীন হত, তারা নিশ্চিন্ত থাকত এই ভেবে যে শ্রীকৃষ্ণ তাদের রক্ষা করবেন। এরজন্য তারা কোনও দুশ্চিন্তাই করত না। যদিও বন্ধুরা বিপদে পড়লে শ্রীকৃষ্ণ খানিকটা উদ্বেগ অনুভব করতেন। কিন্তু তাঁর বন্ধুরা মনে করত, “এই তো শ্রীকৃষ্ণ এখানে রয়েছেন। তিনিই
আমাদের রক্ষা করবেন।
পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ভারতবর্ষের বৃন্দাবনে যখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁর লীলাবিলাস করতেন সেই সময় প্রতিদিনই তিনি তাঁর
গোপসখা, গাভী ও বাছুরদের নিয়ে যমুনার তীরে খেলতে যেতেন। আর সেই সময় প্রায়ই শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর সখাদের বধ করার জন্য কংস কোনও কোনও দানবকে পাঠাত। তা সত্ত্বেও গোপ বালকরা নির্ভয়ে খেলত, কারণ তারা নিশ্চিতভাবে জানত শ্রীকৃষ্ণ তাদের অবশ্যই রক্ষা করবেন। আর এটিই হল আধ্যাত্মিক জীবনের বৈশিষ্ট্য, যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে আত্মসমর্পণের মাধ্যমেই প্রত্যেকের নিশ্চিত জীবনের সূচনা হয়।
শ্রীকৃষ্ণের চরণে আত্মসমর্পণের অর্থ হল তাঁর প্রতি একান্ত বিশ্বাস রাখা, যে কোনরকম বিপদের সময়ে তিনিই আমাদের রক্ষা করবেন। আর এই আত্মসমর্পণের প্রথম পদক্ষেপই হল শুধুমাত্র ভক্তিমূলক ক্রিয়াকলাপ করা। সেইসাথে ভগবদ্ভক্তির প্রতিকূল ক্রিয়াকলাপগুলো বর্জন করা। এর পরবর্তী পদক্ষেপ হল শ্রীকৃষ্ণের প্রতি মনে মনে আস্থা অর্জন করা যে কোনরকম বিপদে কেবলমাত্র তিনিই আমাদের উদ্ধার করবেন। প্রকৃতপক্ষে বাস্তব সত্য হল যে, তিনি সবসময়ই আমাদের রক্ষা ও প্রতিপালন করে চলেছেন। কিন্তু মায়ার (বিভ্রান্তি) কারণে আমরা মনে করি থাকি যে, আমরা বুঝি খাদ্য সংগ্রহ ও গ্রহণের মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের প্রতিপালন করছি।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই ভক্তদের প্রতিপালন করেন এবং তাদের জীবন সুরক্ষিত করেন। অন্যদিকে শ্রীকৃষ্ণের বহিরঙ্গা শক্তি অর্থাৎ মায়াদেবী অন্য সব সাধারণ জীবদের প্রতিপালন করেন। এই মায়াদেবীই শ্রীকৃষ্ণের প্রতিভূ রূপে বদ্ধ জীবদের তাদের ত্রুটিপূর্ণ কার্যকলাপের জন্য শাস্তি দেন। যেকোনও দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমরা যেমন দেখি, সুনাগরিকদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার সরাসরি সুব্যবস্থা করেন, অন্যদিকে দুষ্কৃতীদের কারাবিভাগের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ করেন। কারারুদ্ধ দুষ্কৃতীদের জন্যও সরকার উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করেন, অসুস্থ হলে তাদের জন্য হাসপাতালে সুচিকিৎসার বন্দোবস্তও করা হয়। কিন্তু পুরোটাই করা হয় কারাগারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাধীনে।

No comments:

Post a Comment